পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস থেমে নেই। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে বসবাস করা হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রচারণা চালায় প্রশাসন। পরিবারগুলোর স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যাপারে উদ্যোগ নেই কোনো সংস্থার।
স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা না হলে পাহাড় ছাড়তে নারাজ ঝুঁকিতে বসবাসকারীরা। ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষের অকালে প্রাণহানি ঘটলেও পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কোনো উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি।।
মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়ায় পাহাড় ধসে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ১৯ জুন রাত ৯ টায় অফিস পাড়া থেকে পাহাড়ের কিনারা থেকে পাহাড় ধসের মাটি কেটে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা৷ সে স্থানীয় গোরা পুছোন এর ছেলে রবিউল হোসেন(৫)। বিষয়টি নিশ্চিত করেন স্থানীয়রা। জেলার শহরে শতাধিক পরিবার মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের ঢালে ও পাদদেশে বসবাস করছে। বৃষ্টির সময় এসব পরিবারের বাসাবাড়ির ওপর পাহাড় ধসে পড়ে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার বিকালে বৃষ্টির সময় খেলতে গিয়ে শিশুটি নিখোঁজ হয়। পরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজর পর রাত ৯ টার দিকে স্থানীয় এক শিশুর দেখিয়ে দিলে উক্ত স্থানে পাহাড় ধসের মাটি কাটলে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। সদরের ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম নিউজকে বলেন, অন্য এলাকায় থাকতে হলে বেশি ভাড়া দিতে হবে। যা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এখানে আছি।
স্থানীয় লোকজন জানান, বৃষ্টিপাত হলে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারী ব্যক্তিদের বাসাবাড়ি ছেড়ে দিতে অথবা সতর্ক থাকতে মাইকিং করা হয়। জেলার মধ্যে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন গিয়ে দেখা যায়, পাশের পাহাড় থেকে নেমে আসা একটি ঝরনার দুই ধারে ৩০-৩২টি পরিবার মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। ঝরনার পানিপ্রবাহের মাঝখানে বিধ্বস্ত একটি কালভার্টের ওপর তৈরি করা বাসায় বসে নাসিমা বেগম নামের এক নারী জানান, তারা চকরিয়া থেকে এসেছেন। দুই বছর ধরে তাঁরা এখানে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, তাঁদের বাসাটি যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। আবদুর রহিম নামের এক ব্যক্তি ঝরনার পানিপ্রবাহ ঘেঁষে পাহাড়ের প্রায় ২০ ফুট নিচে আর তাঁর বড় ভাই নুরু পাহাড়ের চূড়ায় বসবাস করেন। যেকোনো সময় বড় ভাই নুরুর বাড়িসহ পাহাড়ধসে ছোট ভাই আবদুর রহিমের বাড়ির ওপর পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
বিভিন্ন এনজিওর জরিপে দেখা গেছে, বান্দরবানের সাত উপজেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের ঢালুতে (পাদদেশে) বসবাস করছেন চল্লিশ হাজারেরও বেশি পরিবার।এবিষয়ে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইয়াছিন বলেন, পাহাড় ধসে শিশুর মৃত্যুর বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান।
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম জাগো জানান, পাহাড়ে বালির আধিক্য, পাহাড়ের উপরিভাগে গাছ না থাকা, গাছ কেটে ভারসাম্য নষ্ট করা, পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতবাড়ি গড়ে তোলা, পাহাড় থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখা, বনায়নের পদক্ষেপের অভাব, বর্ষণে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালি ও মাটি অপসারণে দুর্বলতা ইত্যাদির কারণে পাহাড় ধস হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, পাহাড়ধসে মৃত্যু ঠেকাতে হলে সবাইকে নিয়ে আগে একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা তৈরি করা প্রয়োজন। জেলা প্রশাসনের ডেপুটি নেজারত (এনডিসি) শামীম হুসেন জানান, পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য প্রশাসন থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।