বন্যার পানি থেকে বাঁচতে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার দশগাঁও নওয়াগাঁও উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছিলেন জয়নবা আক্তার ও তাঁর স্বামী শাহীন আহমেদ। সেখানে গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে একটি মেয়েসন্তানের জন্ম দিয়েছেন জয়নবা।
সন্তান জন্মের পর বেশ খুশি তিনি। বললেন, ‘আল্লাহর হুকুম অইছে, আমারে তাইন একটা ফুরি দিলাইছোইন। বহুত শুকরিয়া।’আজ শনিবার দুপুরে ওই আশ্রয়কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে জয়নবা-শাহীন দম্পতির সঙ্গে দেখা হয়। জয়নবা তখন সন্তানের যত্ন নিচ্ছিলেন। এখনো কোনো নাম রাখা হয়নি। প্রথম আলোকে বললেন, ‘পানি যে হারে বাড়ছিল, ইখান দেখিয়া পেটর বাচ্চা লইয়া ডরাই গেছলাম।
বাচ্চা ইগু দুনিয়াত আওয়ার টাইম অই গেছিল।’জয়নবার প্রসব বেদনা ওঠে বৃহস্পতিবার ভোররাতে। তিনি বলছিলেন, ‘যে বেলা আমার বেদনা উঠছিল, তখন বাইরে ধুম ঝরি (প্রচুর বৃষ্টি)। স্কুলঘরোর নিচ তখন পানিয়ে মুরো (ডুবে) গেছেগি। আল্লাহ ডাক ছাড়া আমি আর কুনতা মুখো আনতাম পারছি না। আল্লাহর হুকুম অইছে আমারে তাইন একটা ফুরি (মেয়ে) দিলাইছোইন। বহুত শুকরিয়া।’সন্তান জন্মদানের পরে কিছুটা অসুস্থ বোধ করছেন বলে জানালেন জয়নবা। বলেন, মাঝেমধ্যে তাঁর মাথা ঘোরে।
তখন চোখে ঝাপসা দেখেন। মাথাব্যথাও করে। অর্থের অভাবে ওষুধ কিনতে ও চিকিৎসকের কাছে যেতে পারছেন না। নবজাতক ভালো আছে। বুকের দুধ পেতেও সমস্যা হচ্ছে না।তিন দিন আগে গত বুধবার আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছিলেন জয়নবা ও তাঁর স্বামী। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, বন্যার পানি হঠাৎ বাড়তে শুরু করে। তাঁরা যখন ঘর ছাড়েন, তখন সেখানে প্রায় হাঁটুপানি। আর কলেজে যাওয়ার রাস্তা প্রায় কোমরসমান পানিতে ডুবে গিয়েছিল। স্বামীর হাত ধরে তিনি প্রথমে হেঁটে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্রোতের কারণে সম্ভব হচ্ছিল না। পরে তাঁর স্বামী এক বাড়ি থেকে নৌকা নিয়ে আসেন। সেই নৌকায় করেই আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছান তাঁরা।
জয়নবা-শাহীন দম্পতির ঘরে আরও তিন ছেলেসন্তান রয়েছে। নাম ফাহাদ, সালমান ও আবু সুফিয়ান। শাহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। মে মাস থেকে সেটি অচল হয়ে পড়ে আছে। বন্যায় অটোরিকশাটি পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। পরে আর মেরামত করতে পারেননি। শাহীন বলেন, ‘সিএনজি ঠিক করাইতে শহর তনে মেকার আনা লাগে। পকেটে টেকা নাই। এর লাগি ঠিক করাইতাম পাররাম না।’এদিকে ত্রাণসহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে জয়নবা বলেন, তাঁদের কাছে চার কেজি চাল, ২৫০ গ্রাম ডাল ও ১ কেজি আলু আছে। টিন আর ইট দিয়ে একটি অস্থায়ী চুলাও বানিয়েছেন। কিন্তু রান্নার জন্য লাকড়ি পাচ্ছেন না। ফলে গতকাল থেকে শুকনা খাবার খেয়ে রয়েছেন।