বর্তমান ক্রিকেটে সম্পূর্ণ নতুন এক ধারা নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করতে আগ্রহী ‘প্রথম’ পাওয়ার হিটিং কোচ

তিনি প্রচলিত ধারার ব্যাটিং কোচ নন। বলা যায় ক্রিকেটে সম্পূর্ণ নতুন এক ধারার জনক । জুলিয়ান উডের নিজের অন্তত দাবি সেটাই। এই সময়ের ক্রিকেটে পাওয়ার হিটিং কোচের ধারণাই যে নিয়ে এসেছেন তিনি। নতুন এক মেথড নিয়ে কাজ করেছেন পিএসএল,

বিগ ব্যাশের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরে। তার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজের ফল পেয়েছেন স্যাম বিলিংস, লিয়াম লিভিংস্টোন, পৃথ্বী শোর মতো পাওয়ার হিটাররা। এক সময় প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছেন এই ইংলিশ।

পরে ক্রিকেটের সঙ্গে মিলিয়েছেন বেসবলের হিটিং মেথড। বিপিএলের দল সিলেট সানরাইজার্সের ব্যাটিং পরামর্শক হয়ে আসা উড কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে। পাওয়ার হিটিং কোচ হওয়ার পেছনের গল্পটা বলুন

জুলিয়ান উড: ১২ বছর আগে আমি আমেরিকা গিয়েছিলাম বেসবলের খেলা দেখতে। আমি একজন ক্রিকেটার। আমি দেখছিলাম টি-টোয়েন্টিটা কোন দিকে যাচ্ছে। হয়ত অন্যদের থেকে আমি আরও তাড়াতাড়ি বুঝতে পারছিলাম খেলাটার গতিপথ। আমি দেখলাম খেলাটা বদলাচ্ছে, টেকনিক বদলাচ্ছে।

বাউন্ডারির চাহিদা বাড়ছে। ভাষাটা বদলাচ্ছে। ১০ বছর আগে যখন আপনি ব্যাটিং নিয়ে কথা বলতেন টেস্ট ক্রিকেট, ৫০ ওভারের ক্রিকেট ও টি-টোয়েন্টির ভাষাটা ছিল একইরকম। কিন্তু সেই ভাষাটা এখন বদলে গেছে। এখন অনেক হিটিং নির্ভর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট।

আমি বেসবলের টেকনিক দেখলাম, কারণ তারা জানে কীভাবে হিট করতে হয়। আমি এটার সঙ্গে ক্রিকেটের একটা সমন্বয় ঘটানোর চিন্তা করলাম। আমি ফিরে এসে খেলাটা পর্যবেক্ষণ করে বুঝলাম অন্যদের থেকে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হচ্ছে। আমার আগে কেউ এটা নিয়ে ভাবেনি।

বেসবলের সঙ্গে ক্রিকেটের পাওয়ার হিটিং মেলালেন? উড: ওটা তো হিটিং নির্ভর। এটা পুরোটাই বল পেটানোরর ব্যাপার। ক্রিকেট ব্যাটিং হাতের উপর অনেক নির্ভরশীল ছিল। আমি যখন আমেরিকায় গেলাম,

অনেক পেশাদার লোকের সঙ্গে আলাপ হলো তাদেরও মনে হচ্ছিল খেলাটা বদলাচ্ছে। কেবল হাতের উপর নির্ভর না হয়ে পুরো শরীরকে ব্যাবহার করে শক্তি তৈরি করার ব্যাপার নিয়ে পরে আমি ভাবতে শুরু করেছি। যারা এতটা পেশিবহুল না তাদের শক্তি তৈরি হবে অন্যভাবে।

বাংলাদেশের খেলোয়াড়রাও কেউ পেশিবহুল না। তাদের জন্য পাওয়ার হিটিং কঠিন না? উড: আমি বাংলাদেশে এলাম প্রথমবার। দুটো অনুশীলন সেশন করেছি। এরমধ্যে দলে সবাই আমার কাছে এসে পাওয়ার হিটিং শিখতে চাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমি তাদের খেলা দেখলাম।

এই ছেলেরা সত্যি ভাল খেলোয়াড়, প্রতিভাবান। কিন্তু তাদের এটা ভিন্নভাবে করতে হবে। আমি তাদের বললাম, ‘বল মারা দেখাও’। দেখলাম তারা সবাই বিগ হিটারদের মতো পজিশন নিচ্ছে। ক্রিস, গেইল, পোলার্ড, রাসেল এরা তো প্রায় দানব। ওরা তো পেশিবহুল। আমি তাদের বলেছি,

‘তোমাদের আছে স্কিল আর টাচ। এখন পাওয়ার দরকার। কিন্তু তোমরা তোমাদের পাওয়ার ভিন্নভাবে আয়ত্ত করতে পার। তোমাদের অনেক বেশি ছন্দ এবং টাইমিংয়ের উপর ভরসা করতে হবে। এক্ষেত্রে স্মার্টনেসের বিকল্প নেই। যদি তারা এই চিন্তায় এগুতে পারে তাহলে তাদের ব্যাটিং বিকশিত হবে।

এটা তো পুরো বৈজ্ঞানিক ব্যাপার উড: বিজ্ঞান অনেক সাহায্য করছে। আমি হাতের স্পিড নিয়ে কাজ করেছি। আমি এটা ১০ মিনিটে করে দেখাতে পারি। এটা করতে আমি ভারি ব্যাট, আর ভেজা নরম বল ব্যবহার করব। সংযোগ হচ্ছে আসল। নিখুঁতভাবে ব্যাটে-বলে সংযোগের ব্যাপার ঠিকভাবে করতে হবে।

পেশিবহুল ক্রিকেটারদের মিস হিটও ছক্কা হয়ে যায়। যারা এদিক থেকে পিছিয়ে থাকাদের স্কিল, টাচ ও পাওয়ারের উপর নির্ভর করতে হয়। তিনটাই দরকার হয়। পেশিবহুল ক্রিকেটারদের সঙ্গে হিটিংয়ের লড়াইয়ে জিততে হলে অনেক স্মার্ট হতে হবে।

স্যাম বিলিংস, লিভিংস্টোনের অ্যাপ্রোচ বদলাতে আপনার ভূমিকা ছিল। সেটা যদি বলতেন উড: লিভিংস্টোনের প্রবনতাই হচ্ছে আক্রমণ করবে। তার মনোভাব খুব ভাল। এমনকি সে যখন খুব তরুণ ছিল তখন থেকে। একদম কাঁচা অবস্থাতাতেই তার মনোভাব ইতিবাচক ছিল,

শারীরিকভাবেও শক্তপোক্ত ছিল। কেবল একটা স্ট্রাকচার দরকার ছিল। কিছু কৌশল আয়ত্তের ব্যাপার ছিল। বেইজ ও ব্যাক হিপ এক্ষেত্রে মূল বিষয়। আপনি যদি একটা বল জোরে মারতে চান দ্রুত ঘুরতে হবে।

বিলিংসের খুব দ্রুতগামী। তার যেটা ছিল হাত পড়ে যেত। আমরা তার হাত উপরে রাখার চেষ্টা করলাম। এখন আপনি দেখবেন সে অনেকটা বিরাট কোহলির মতো হাতটা উপরে রাখতে পারে। ক’ বছর আগেও তার হাত পড়ে যেত।

একইসঙ্গে ওভারহিটের কোন দরকার নেই। অনেকেই ওভারহিট করার চেষ্টা করে। ওভারহিট রঙ টার্ম। ওভারহিটের ব্যাপার না এখানে। আপনি দেখেন কেইন উইলিয়ামসন বা পৃথ্বী শোকে। পৃথ্বী যদি গায়ের জোরেই কেবল মারতে যায় আউট হয়ে যাবে।

তাকে পাঞ্চ করতে হবে। এখন দেখেন সে কেমন দুর্ধর্ষ। তার স্ট্রাইকরেট ১৮০ হয়ে যায়। মেন্টাল ফিটনেস কতটা গুরুত্বপূর্ণ উড: অনেক। ছেলেদের সঙ্গে কথা হলো। অনেকেই প্রিমেডিটিয়েট করে। আপনি যখন প্রিমেডিটিয়েট করবেন তখন আর বিকল্প থাকবে না । কেউ কেউ এটা করতে পারে। কিন্তু তাদের বললাম, ‘তোমাদের মাথাটা খোলা রাখতে হবে।’

আগে থেকে ঠিক করে ফেললে হয়ত আমি ওই বলের মেরিট অনুযায়ী জায়গায় যেতে পারব না। তখন আপনাকে মানিয়ে নিতে হবে। আমাকে তখন ১ বা দুই নিতে হবে। আপনি যদি টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ২০ বলের মধ্যে তিনটা ছক্কা মারতে পারেন তাহলে দারুণ। কারণ তখনো আপনার হাতে ১৭ বল আছে। কাজেই খুব চতুর হতে হবে। নিজের শক্তির উপর আস্থা রাখাটাই ভাল।

উপমহাদেশের বাকি দেশের ক্রিকেটাররাও পেশিবহুল না। এক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করা ভাল? উড: পাকিস্তানিরা খুব আগ্রাসী। তাদের দুর্দান্ত একটা মাইন্ডসেট আছে। তাদের হয়ত একটা স্ট্রাকচার দরকার। ভারতীয়রা খুবই ফ্লেয়ার, একটা ছন্দে খেলে। তারা ছন্দ-টাইমিং দিয়ে পাওয়ার জেনারেট করে। তারা খুব ছন্দময়। এটা বিশাল একটা ব্যাপার। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশালদেহীদের জন্য প্রক্রিয়াটা ভিন্ন।

এখানকার উইকেটও একটা বাধা। বাংলাদেশে খেলা হয় মন্থর উইকেটে। কতটা কঠিন পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য? উড: আপনাকে সোজা মারতে হবে। স্ট্রাইকারদের জন্য কঠিন। আপনাকে চতুর হতে হবে। বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানও এখানে এসে বুঝার চেষ্টা করবে কোন গতিতে বল আসছে। সেটা মাথায় নিয়ে কীভাবে ব্যাট চালাতে হবে ঠিক করতে হবে। যত দ্রুত এটা করতে পারবেন তত ভাল। ইংল্যান্ডের পাওয়ার হিটার অনেক। আবার তারা মানিয়ে নিয়ে খেলতেও জানে। খেলাটা বিকশিত করতে হবে। চিন্তাটা পরিস্কার হওয়া চাই।