ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের শেষটি ছিল সেন্ট লুসিয়ায়। এই ম্যাচে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে গিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।
এর আগে তারা অ্যান্টিগা টেস্টেও হেরে যাওয়ায় ২-০তে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছে স্বাগতিকরা। এতে বাংলাদেশ দলকে হোয়াটওয়াশের স্বাদ দিয়ে সাদা পোশাকে টাইগারদের বিপক্ষে আধিপত্য ধরে রাখল উইন্ডিজ।
ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের দলের বিপক্ষে এ নিয়ে শেষ ৪ দেখায় টানা ৪ পরাজয় বাংলাদেশের, সব মিলিয়ে ২০ টেস্টে এটি ১৪তম পরাজয়।
এই হারের মধ্য দিয়ে পরাজয়ের এক মাইলফলক স্পর্শ করল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ২২ বছরে ১৩৪টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ দল।
তাই দলের এমন দূর্দশা কাঁটাতে যার হাত দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্থান কোটি ভক্তের হৃদয়ের ভালোবাসা সেই আশরাফুলএর সব কিছু ভুলে গিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উচিত তাকে বুকে টেনে নেওয়া।
তাকে আর একটি বার জাতীয় দলে খেলার সুযোগ করে দেওয়া। এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে সাদা পোশাকে হারের সেঞ্চুরি পূর্ণ করল তারা। যেখানে ১০০ হারের বিপরীতে টাইগারদের জয় ১৬টি ও ড্র আছে ১৮টি।বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থানের পেছনে যার অবদান অনস্বীকার্য তিনিই আমাদের সবার ভালোবাসার আশরাফুল।
তিনি জন্মেছিলেন বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, সাহসী ক্রিকেট খেলে এদেশের সাধারণ মানুষের ঘরের ছেলে বনে গিয়েছিলেন মূহুর্তেই। একজন রিক্সা চালক থেকে দিনমজুর সবার কাছে তিনি ছিলেন প্রিয় আশরাফুল মামা।আর শিক্ষিত ক্রিকেট যোদ্ধারা যাকে আদর করে ডাকতো অ্যাশ।
কিন্তু নিজের ক্যারিয়ারকে অন্ধকার কোনো এক কানাগলির সন্ধান দিয়েছিলেন নিজের ভুলে। ফিক্সিং করে জনপ্রিয় আশরাফুলের ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হলো এই গল্প তো সবার জানা। কেমন আছেন এখন সেই প্রিয় সুপারস্টার আমাদের? নিজেকে হারিয়ে যেতে দেননি মোটেও!জাতির কাছে বেঈমানী করে ভিলেন বনে যাননি আজও!
জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বার বার। সবার ভুল স্বীকার করার সাহস তো থাকে না। তিনি আমাদেরকে আবার বাধ্য করেছেন তাকে ভালোবাসতে। জাতীয় দলে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ভাগ্য প্রসন্ন হয়নি আমাদের ছোটবেলার এই নায়কের। তিনিই আমাদের ক্রিকেটের প্রথম নায়ক এটা কি করে ভুলবো আমরা?
প্রথম প্রেম নাকি ভোলা যায় না! আশরাফুল আমাদের প্রথম প্রেম।ফিরে তাকানো তার সেই ইনিংসগুলোর দিকে। শ্রীলঙ্কার সাথে অভিষেকের সেঞ্চুরি তো এখনো ওয়ার্ল্ড রেকর্ড! ক্রিকেট প্লেয়িং দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের নায়ক তো তিনিই!! কি বিশ্বাস হয়না?? ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম জয়ে তিনি খেলেন ৩২ বলে ৫১ রানের ঝড়ো ইনিংস।
হন ম্যাচসেরা।অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয় আসে ২০০৫ সালে। ১০১ বলে খেলেন ১০০ রানের এক অনবদ্য ইনিংস। আবার ২০০৬ ও ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কা ও কানাডার বিপক্ষে প্রথম জয়েও ছিলো তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান। করেছিলেন যথাক্রমে ৫১ ও ৬০ রান। সাউথ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম জয় পায় ২০০৭ সালে।
সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটিতে তিনি খেলেন ৮৩ বলে ৮৭ রানের এক কার্যকরী ও ম্যাচ উইনিং ইনিংস। হন ম্যাচ সেরা। একই বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যাট হাতে করেন ৬১ রান। ম্যাচসেরার পুরস্কারটিও ওঠে তার হাতে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো জয় পায় আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
দুটি ম্যাচেই অপরাজিত থাকেন যথাক্রমে ৬৪ ও ৬০ রান করে। ২০০৯ সালে আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রথম জয়ে ১০৯ রান করে হন ম্যাচসেরা। আমাদের লিটল মাস্টারের মুখটা মলিন হয়ে গেছে। মুখে হাসি নেই কবে থেকে! আমরা যদি আমাদের ঘরের ছেলেকে ক্ষমা করে না দেই তাহলে কাকে দেবো?? প্রিয় আশারাফুল তোমাকে আমরা ভালোবাসি আগের মতোই। যা দিয়েছো তার জন্য আমরা গর্বিত।