বিস্ময়কর সাপের লাঠিটির বয়স প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর

৪ হাজার ৪০০ বছরের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্’বিক নিদর্শনটি একেবারে ভিন্ন। বিস্ময়কর তো বটেই।এত যে পুরোনো, তারপরও অবিশ্বা’স্যভাবে সুরক্ষিত।প্রত্নবস্তুটি দেখে ‘সা’পও মর’বে, লাঠিও ভাঙবে না’ কথাটি মাথায় আসে। কেননা প্রত্নবস্তুটি দেখলে মনে হবে, এটি একই সঙ্গে সা’প ও লাঠি!

আসলে এটি একটি সা’প আকৃতির কাঠের লাঠি। ফিনল্যান্ডের একদল প্রত্নতাত্ত্’বিক দেশটির দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের ইয়ারভেনসিউ ১ নামের এক জলাভূমি থেকে এই লাঠি আবি’ষ্কার করেছেন। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে জলাভূমিটি আবি’ষ্কৃত হয়।তারপরও বহুকাল প্রত্নস্থলটি পড়েই ছিল।২০১৯ সালে প্রথম এখানে প্রত্নতাত্ত্’বিক খনন শুরু হয়। এই প্রত্নস্থলে ৪ হাজার থেকে ২ হাজার খ্রি’ষ্টপূর্বাব্দে মানুষ বসবাস করত। গবেষকেরা বলছেন, লাঠিটি ৪ হাজার ৪০০ বছরের প্রাচীন।

অর্থাৎ এটি প্রস্তরযুগের শেষাংশ নিওলিথিক সময়কালের।উত্তর ইউরোপে ওই সময়ের যেসব প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে, সেগু’লোর চেয়ে একেবারেই ব্যতিক্রমধর্মী এই সা’প আকৃতির কাঠের লাঠি।এটি ২০২০ সালে আবি’ষ্কৃত হলেও এ–বি’ষয়ক গবেষণাপত্রটি বিখ্যাত কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেসের এন্টিকুইটি ম্যাগাজিনে ছাপা হয় এ বছরের ২৯ জুন।গবেষণাপত্রের লেখক ফিনল্যান্ডের তুর্কু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সাতু কোইভিস্ত।

তিনি বলেন, ‘এটি প্রমাণ আকারের একটি সা’পের মতো দেখতে চমৎকার এক লাঠি। জলাভূমির প্রত্নতাত্ত্’বিক হিসেবে আমি বহু প্রত্নবস্তু দেখেছি, কিন্তু এই লাঠি পাওয়ার পর আমি পুরোপুরি ‘হতবাক হয়ে যাই।ধারণা করা হচ্ছে, শামানবাদীরা তাদের ধর্মানুষ্ঠান পালনে লাঠিটি ব্যবহার করত। শামানবাদ হলো একটি প্রাচীন ধর্মবিশ্বা’স। শামানেরা পৃথিবী ও আধ্যাত্মিক জগতের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে পারত বলে বিশ্বা’স করা ‘হতো।

ফিনো-ইউগ্রিক ও সামি সম্প্রদায়ের (উত্তর মেরু, ফেনো-স্ক্যান্ডিনেভিয়ার উপ-সুমেরু এবং রাশিয়ায় বসবাসকারী) লোকজনের কাছে সা’প প্রতীকী অর্থ বহন করে। তাঁরা বিশ্বা’স করতেন, শামানেরা নিজেদের সা’পে রূপান্তর করতে পারত। শামানবাদীরা মনে করতেন,পানির নিচেই পরকালের অবস্থান। লাঠিটিও পাওয়া গেল জলাভূমিতেই।সাতু কোইভিস্ত বলছেন, এই জলাভূমি থেকে পাওয়া বিভিন্ন প্রত্নবস্তু আমা’দের প্রাচীনকালের মানুষকে বুঝতে সাহায্য করে। সে সময়ের ভূদৃশ্য সম্পর্কেও আমর’া ধারণা পাই, যেখানে তারা জাগতিক ও ইহজাগতিক চর্চা করতেন।

প্রাগৈতিহাসিক লাঠিটি ৫৩৫ মিলিমিটার লম্বা এবং ২৫ থেকে ৩০ মিলিমিটার পু’রু। এক টুকরা কাঠ দিয়ে লাঠিটি তৈরি করা হয়েছিল। কোন কাঠ দিয়ে তৈরি, তা জানতে পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলছে। লাঠির একদিক সা’পের হাঁ করা মুখ এবং অন্য দিকটা সা’পের লেজের মতো করে তৈরি করা।গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সা’পটি দেখতে ঘেসো সা’প বা ইউরোপীয় অ্যাডারের মতো। লাঠিটি ভাস্কর্য ছিল নাকি কোনো শামানবাদীর হাতে থাকত, নাকি দুটোই, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তথ্যসূত্র : এন্টিকুইটি ম্যাগাজিন