শাহীনুর বেগম (৩০)। শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবর শাহ থানাধীন বরিশালঘোনায় পাহাড়ধসে মাটিচাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
পাহাড়ধসে শাহীনুর মারা গেলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় তার ছয় মাস বয়সী যমজ সন্তান। নিজের মৃত্যু জেনেও শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত শাহীনুর বুকে আঁকড়ে ধরেছিলেন যমজ সন্তান তাসকিয়া ইসলাম তানহা ও তাকিয়া ইয়াসমিন তিন্নিকে।
এছাড়াও দুর্ঘটনার রাতে খালার বাসায় থাকায় প্রাণে বেঁচে যায় শাহীনুরের বড় ছেলে তরিকুল ইসলাম তানিম।পাহাড়ধসের পরপরই তাদের উদ্ধার করেন স্থানীয় লোকজন। উদ্ধারকারীদের একজন মো. আশিক বলেন, পাহাড়ধস হয়েছে জেনে দ্রুত তাদের ঘরে যাই। এসময় শাহীনুরের বোন মাহিনুর (২০) মাটির নিচে চাপা থাকলেও শাহীনুরের এক পা আটকে ছিল। তখনো শাহীনুরের বুকেই ঘুমিয়ে ছিল দুই শিশু। পরে আমরা দুই শিশুকে উদ্ধার করি। যখন দুই শিশুকে উদ্ধার করি, তখনো শাহীনুরের নিঃশ্বাস, শরীরেও উঞ্চতা ছিল। মাটি সরিয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
আরেক উদ্ধারকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শাহীনুরের শ্বশুরবাড়ি মীরসরাইয়ে। দুই বাচ্চা গর্ভে থাকাকালীন মায়ের বাসায় আসেন। এখানে হাসপাতালে যমজ বাচ্চা হয় তার। প্রসবপরবর্তী সেবার জন্য মা-বোনের সঙ্গে ছিলেন। কয়দিন পরই শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়ার কথা ছিল তার। দুই সন্তানকে টিকা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কয়েকদিন আগে টিকাও দেওয়া হয়েছিল তাদের। তবে আর শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হলো না শাহীনুরের। ছোট্ট দুই সন্তানও এতিম হয়ে গেলো।
শনিবার (১৮ জুন) সকালে শাহীনুরের মরদেহ যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে, তানহা ও তাকিয়া তখন খালা নার্গিসের বাসায় খেলা করছিল। সময় যত গড়াচ্ছে, ধীরে ধীরে মায়ের অনুপস্থিতি বুঝতে পারছে অবুঝ এ শিশু দুটি। সন্ধ্যায় কান্নাও করছিল। তাদের কান্না থামানোর জন্য আশপাশের বাসার সবাই জড়ো হয় নার্গিসদের বাসায়। খিদেও পেয়েছিল তাদের। ক্ষুধা নিয়েই একজন খালাতো বোনের কোলে ঘুমিয়ে গেলেও অন্যজন আঙুল মুখে নিয়ে চুষতে থাকে।
শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বুকে আঁকড়ে রেখেছিলেন যমজ সন্তানকে যে বাসাটি ধসে পড়েছে সেটি শাহীনুরের বাবার বাসা। কিছুটা দূরে অবস্থিত বোন নার্গিসের বাসায়ই ছিলেন শাহীনুর। কিন্তু শুক্রবার দিবাগত রাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে ওই বাাসয় ঘুমাতে যান শাহীনুর। কে জানতো, এই ঘুমই বাবা-মায়ের সঙ্গে তার শেষ ঘুম। পাহাড়ধসে আহত অবস্থায় শাহীনুরের বাবা-মাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা সেখানেই চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তারা আশঙ্কামুক্ত।
কথা হয় যমজ শিশুদের বাবা জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে। ঘটনার সময় ছেলে তানিমকে নিয়ে শ্যালিকার বাসায় ছিলেন তিনি। জয়নাল বলেন, রাতে যখন বৃষ্টি বাড়ছিল, তখন তাদের চলে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু শোনেনি। মা ছাড়া ছয় মাসের দুই শিশুকে নিয়ে উৎকণ্ঠার কথাও জানান জয়নাল।শুক্রবার (১৭ জুন) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে চট্টগ্রামের আকবরশাহ এলাকায় দুটি পাহাড় ধসের ঘটনায় চারজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন।পাহাড়ধসের ঘটনায় নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের ১৫ হাজার করে দেওয়া দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।